তাজকিয়া বা আত্মশুদ্ধি
আত্মশুদ্ধির প্রাথমিক সূচনা হল সেই বোধ যে, আধ্যাত্মিক অনুসন্ধান হল আমাদের পূর্বতন মূল্যায়িত জাগতিক বিষয় ও উচ্চাকাঙ্খা হতে উত্তম।
তাজকিয়া কাকে বলে?
তাজকিয়াহ এক’টি আরাবিক শব্দ সংক্ষেপে তাজকিয়া আল-নফস যার অর্থ “আত্মশুদ্ধি”। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যাতে নফস (আত্ম-প্রবৃত্তি বা কামনা) কে প্রবৃত্তি-কেন্দ্রিক দশা থেকে পরিবর্তন করে শুদ্ধি ও আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণের দশায় নিয়ে যাওয়া হয়।
এর ভিত্তি হল বিশুদ্ধ সুন্নত থেকে শরিয়াহ ও কর্ম অধ্যয়ন এবং নিজ কর্মে তার প্রয়োগ ঘটানো ও তার ফলশ্রুতিতে আল্লাহ সম্পর্কে আধ্যাত্মিক সচেতনতা লাভ করা (সর্বদা এই চেতনা নিয়ে থাকা যে, তিনি তার জ্ঞাতের দিক থেকে আমাদের সাথেই আছেন এবং আমরা যা কিছু করি তা জানেন, পাশাপাশি সর্বদা তার যিকির করা বা তাকে স্মরণ করা চিন্তা ও কর্মের মাধ্যমে), যাকে ইহসানের সর্বোচ্চ পর্যায় বলা হয়। যে ব্যক্তি নিজেকে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে তাকে জাকি (আরবি: زكيّ) বলা হয়।
তাজকিয়ার পথে সমস্যা মূলত ৫টি
খালিদ বিন আব্দুল্লাহ আল-মুসলেহ তার ইসলাহে কুলুব নামক গ্রন্থে বলেছেন, তাজকিয়ার পথে প্রধান সমস্যা হল পাঁচটিঃ
- শিরক করা
- সুন্নতের খেলাফ করা ও বিদআতের অনুসরণ
- নফসের অনুসরণ
- সন্দেহ
- গাফলতি বা অবহেলা
পাশাপাশি আত্মশুদ্ধির পন্থাসমূহকে তিনি আট ভাগে ভাগ করেছেনঃ
- কুরআন পাঠ
- আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা
- জিকির করা
- তওবা ও ইস্তিগফার করা
- হেদায়েত ও আত্মশুদ্ধির জন্য দোয়া
- আখেরাতের স্মরণ করা
- সালফে সালেহীনদের জীবনী পাঠ
- উত্তম, সৎ ও ধার্মিক লোকের সাহচার্য
তাজকিয়ায়ে নফসের প্রক্রিয়া শুরু হয় “সকল কর্ম নিয়তের উপর নির্ভরশীল” এই হাদিসকে ধারণ করার মাধ্যমে এবং শেষ হয় উত্তম চরিত্র, “ইহসান”, “এমনভাবে ইবাদত কর যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ” এই গুণগুলো নিজের মধ্যে পূর্নতা দানের মাধ্যমে, যা আছে সহীহ বুখারীর প্রথম হাদীসে ও সহীহ মুসলিমের “জিবরাঈলের হাদিস” নামে খ্যাত বহুল উল্লেখিত হাদিসে।
সদাচরণ বৃক্ষ
- আখলাকে হামিদাহ-উত্তম আচরণ
- ‘আস-সিদক-সত্যবাদিতা
অসদাচরণ বৃক্ষ
- আল-গযব‘ – ক্রোধ:
- আল-হিকয – অপচিকির্ষা বা বিদ্বেষ
- আল-হাসাদ – হিংসা বা ঈর্ষা;
- আল-উজব – বড়াই
- আল-বুখল – কৃপণতা
- আল-তামা – লোভ –
- আল-জুবন – কাপুরুষতা
- আল-বাতালাহ – অলসতা
- আল-রিয়া’ – লোক দেখানো কাজ:
- আল-হিরশ
- আল-হাযামাহ
- আল-গাওয়াবাহ ওয়াল-কাসালাহ –
- আল-হাম্ম – দুশ্চিন্তা
- আল-গাম –
- আল-মাহনিয়াত – আটশত নিষিদ্ধ কাজ
- গাফলাত বা গাফিলতি
- হুব্ব-এ-দুনিয়া – বস্তুবাদী পৃথিবীর প্রতি ভালোবাসা: বস্তুবাদ.
প্রশান্ত নফস
কুরআন সূরা রাদে র ২৮নং আয়াতে বলে যে, কীভাবে পরিতুষ্ট আত্মার দশা অর্জন করতে হয়ঃ: “যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর যিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়।” [কুরআন ১৩:২৮]