কুরআনের ইতিহাস

পবিত্র কুরআনের ইতিহাস বলতে নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর ধারাবাহিকভাবে নাযিলকৃত আয়াত গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ করাকে বোঝানো হয়। এটি কয়েক যুগ যাবত ব্যাপ্ত ছিল এবং ইসলামের প্রাথমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ।

কুরআন নাযিল

মুসলমানদের বিশ্বাস ও ইসলামি গবেষকদের তথ্য মতে, কুরআন নাযিল ৬১০ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয়, যখন ফেরেশতা জিবরাইলমক্কা নগরীর হেরা পর্বতে, সর্ব প্রথম কোরআনের সূরা আলাক্ব এর প্রথম পাঁচটি আয়াত নবী মুহাম্মাদ ﷺ কে পাঠ করান। আর এই ধারাবাহিকতা ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে তাঁর ইন্তেকালের মাধ্যমে শেষ হয়।

কুরআন গ্রন্থকারে করণ

আমরা আজ যে কোরআন গ্রন্থাকারে দেখতে পাই, সেটি সংকলন করেছেন ইসলামের তৃতীয় খলিফা উসমান রাযিআল্লাহু তা’আলা আনহু(৬৪৪ থেকে ৬৫৬)। তিনি আমিরুল মু’মিনিন বা বিশ্বাসীদের নেতা হিসাবে তার খিলাফতের (ইসলামিক সরকারের) সময় হুুযায়ফা ইবনে ইয়েমেনি (রা:) এর পরামর্শে এ দায়িত্ব পালন করেন। যার জন্য তাকে আজও জামিউল কুরআন বা কুরআন সংকলনকারি বলা হয়।

আর পুরো বিশ্বে তার সময়ে লিপিবদ্ধ করা কুরআন প্রচলিত রয়েছে। অধ্যাপক ফ্রান্সিস এডওয়ার্ড পিটার্স এর ভাষ্যমতে, কুরআন সংরক্ষণের ক্ষেত্রে, পক্ষপাত এড়াতে অত্যন্ত রক্ষণশীলতা ও সর্বাধিক সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে।

আল কুরআন সংকলক বোর্ডের দশজন সাহাবী হলেন,

  1. ওমর ইবনে খাত্তাব
  2. উসমান ইবনে আফফান
  3. আলী ইবনে আবু তালিব
  4. আবু মুসা আল আশ’আরী
  5. উবাই ইবনে কাব
  6. আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ
  7. যায়েদ ইবেন সাবিত
  8. আবু হুরায়রা
  9. আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস
  10. আবু আল-দারদা

এদের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দুইজন হলেন, জায়েদ ইবনে সাবিত রাঃ যিনি নবী মুহাম্মদ সাঃ-এর নিযুক্ত লেখক ছিলেন। অপর জন হলেন উবাই ইবনে কাব রাঃ, যিনি জায়েদের রাঃ পর সবচেয়ে বেশি কোরআন সংকলনে অবদান রেখেছিলেন।

পাঠ্য ও বিন্যাস

কুরআনে বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের মোট ১১৪টি সূরা রয়েছে। সকল সূরা মিলিয়ে মোট আয়াতের (আয়াত আরবি শব্দ, এর সাহিত্যিক অর্থ নিদর্শন) সংখ্যা প্রায় ৬,২৩৬ (মতান্তরে ৬৩৪৮টি অথবা ৬৬৬৬টি)।[৩৫] প্রত্যেকটি সূরার একটি নাম রয়েছে। নামকরণ বিভিন্ন উপায়ে করা হয়েছে; তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সূরার অভ্যন্তরে ব্যবহৃত কোনো শব্দকেই নাম হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে।

হিজ্‌ব বা মানজিল হচ্ছে কুরআনের প্রথম সূরা (সূরা ফাতিহা) ব্যতীত অন্য সূরাগুলো নিয়ে করা একটি শ্রেণি। হিজ্‌ব মুফাস্‌সিল একটি গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য বহন করা। এতে ৭টি মানজিলের মাধ্যমে সবগুলো সূরাকে একসাথে করা হয়েছে।

মানজিলগুলো হচ্ছে:

  • মানজিল ১ = ৩ টি সূরা, যথা, ২—৪
  • মানজিল ২ = ৫ টি সূরা, যথা, ৫—৯
  • মানজিল ৩ = ৭ টি সূরা, যথা, ১০—১৬
  • মানজিল ৪ = ৯ টি সূরা, যথা, ১৭—২৫
  • মানজিল ৫ = ১১ টি সূরা, যথা, ২৬—৩৬
  • মানজিল ৬ = ১৩ টি সূরা, যথা, ৩৭—৪৯
  • মানজিল ৭ = ৬৫ টি সূরা, যথা, ৫০—১১৪

কুরআনের পারা ও সূরা

কুরআনে মোট ৩০ টি পারা বা অধ্যায় রয়েছে। ১১৪টি পূর্নাঙ্গ সূরা রয়েছে। সূরাগুলো বিভিন্ন আকারের হলেও কুরআনের পারাগুলো প্রায় সমান আকারের। কুরআন মুখস্থকরণের ক্ষেত্রে সাধারণতম পারা অনুযায়ী শিক্ষা করানো হয়। যে সকল স্থানে সমগ্র কুরআন পাঠের আয়োজন করা হয় সেখানেও এই পারা অনুযায়ী করা হয়।

বিষয়বস্তু

কুরআনের বিষয়বস্তু আল্লাহর অস্তিত্ব এবং পুনরুত্থান সহ মৌলিক ইসলামী বিশ্বাসসমূহ বর্ণনা করে। পূর্বের নবিগণের বিবরণ, নৈতিক ও আইনগত বিষয়, মুহাম্মাদ সাঃ-এর সময়ের ঐতিহাসিক ঘটনা, দানশীলতা ও নামাজের কাহিনীও কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। কুরআনের আয়াতে ঠিক-বেঠিক সম্পর্কে সাধারণ উপদেশ রয়েছে এবং এতে বর্ণিত ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো সাধারণ নৈতিক পাঠের রূপরেখা প্রদান করে। প্রাকৃতিক ঘটনা সম্পর্কিত আয়াতগুলোকে মুসলিমরা কুরআন এর বার্তার সত্যতার ইঙ্গিত হিসাবে ব্যাখ্যা করে।

তথ্যসূত্র

Sourch – wikipedia bangla.

Islamic Books pdf
Facebook logo
Youtube icon

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *