পৌছে দিন আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে।

আরাবিকঃ

۞ يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ ۖ وَإِن لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ ۚ وَاللَّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ [٥:٦٧]

অনুবাদ

হে রসূল! তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে, তা প্রচার কর। যদি তা না কর, তবে তো তুমি তাঁর বার্তা প্রচার করলে না। আল্লাহ তোমাকে মানুষ হতে রক্ষা করবেন। বস্তুতঃ আল্লাহ অবিশ্বাসী সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না।(1)

তাফসীর

ই আদেশের উদ্দেশ্য হচ্ছে যে, যা কিছু তোমার উপর অবতীর্ণ হয়েছে, তাতে কম-বেশী (সংযোজন-বিয়োজন) না করে এবং কোন নিন্দুকের নিন্দাকে পরোয়া না করে, তুমি মানুষের নিকট পৌঁছে দাও।

আয়েশা (রাঃ)  বলেন

সুতরাং তিনি এমনটিই করেছিলেন। আয়েশা (রাঃ)  বলেন, যে ব্যক্তি এই ধারণা পোষণ করে যে, নবী (সাঃ) কিছু জিনিস গোপন রেখেছেন, (প্রকাশ বা প্রচার করেননি), সে ব্যক্তি নিঃসন্দেহে মিথ্যাবাদী। (2)

একদা আলী (রাঃ)-কে প্রশ্ন করা হল যে, আপনাদের নিকট কুরআন ব্যতীত অহীর মাধ্যমে অবতীর্ণকৃত কোন জিনিস আছে কি?

উত্তরে তিনি কসম করে বললেন, না।

তবে কুরআন উপলব্ধি করার জ্ঞান, আল্লাহ যাকে দান করেন। (বুখারী)

বিদায় হজ্জে বলেছিলেন

বিদায় হজ্জের সময় এক লক্ষ অথবা এক লক্ষ চল্লিশ হাজার সাহাবার সামনে মহানবী (সাঃ) বলেছিলেন,

‘‘তোমরা আমার ব্যাপারে কি বলবে?’’ তাঁরা সকলেই বলেছিলেন যে,‘আমরা সাক্ষ্য দেব যে, (আপনার উপর যে গুরুদায়িত্ব অর্পিত হয়েছিল তা) পৌঁছে দিয়েছেন, (আমানত) আদায় করে দিয়েছেন এবং (উম্মতের জন্য) হিতাকাঙ্ক্ষা ও নসীহত করেছেন।’ মহানবী (সাঃ) আসমানের দিকে আঙ্গুল তুলে ইঙ্গিত করে তিনবার বললেন, ‘‘হে আল্লাহ! আমি কি পৌঁছে দিয়েছি?’’ অথবা তিনি তিনবার বললেন, ‘‘আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাকো।’’ (মুসলিম)

অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি তোমার বাণী পৌঁছে দিয়েছি। তুমি সাক্ষী থাকো, তুমি সাক্ষী থাকো, তুমি সাক্ষী থাকো।

দ্বিতীয় অধ্যায়

আয়াতের এ বাক্যে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে, যে যত বিরোধিতাই করুক, শক্ররা আপনার কেশাগ্রও স্পর্শ করতে পারবে না। হাদীসে বলা হয়েছে, এ আয়াত নাযিল হওয়ার পূর্বে কয়েকজন সাহাবী দেহরক্ষী হিসাবে সাধারণভাবে মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে থাকতেন এবং গৃহে ও প্রবাসে তাকে প্রহরা দিতেন। এ আয়াত নাযিল হওয়ার পর তিনি সবাইকে বিদায় করে দেন। 3

কারণ, এ দায়িত্ব আল্লাহ্ তা’আলা স্বহস্তে গ্রহণ করেন। এ আয়াত নাযিল হওয়ার পর প্রচারকার্যে কেউ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিন্দুমাত্রও ক্ষতি করতে সক্ষম হয়নি।

অবশ্য যুদ্ধ ও জিহাদে সাময়িকভাবে কোনরূপ কষ্ট পাওয়া এর পরিপন্থী নয়। তাছাড়া কোন কোন হাদীসে এ হিফাযতের বাস্তব নমূনাও আমরা দেখতে পাই।

জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ বলেন

আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে নাজদের পথে যুদ্ধে বের হলাম। একটি ঘন বৃক্ষ সম্পন্ন উপত্যকায় পৌছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার তরবারটি একটি গাছের সাথে ঝুলিয়ে রেখে আরাম করছিলেন।

সাহাবায়ে কিরাম ছায়ার আশায় বিভিন্ন দিকে বিক্ষিপ্ত ঘুরাফেরা করছিল।

তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, একটি লোক এসে আমার ঘুমন্ত অবস্থার সুযোগে আমার তরবারটি হাতে নিল। আমি জাগ্রত হয়ে দেখলাম যে, লোকটি আমার মাথার উপর উন্মুক্ত অসি নিয়ে বলছে, তোমাকে আমার হাত থেকে কে রক্ষা করবে? আমি বললাম, আল্লাহ। লোকটি দ্বিতীয়বার আমাকে বলল, তোমাকে আমার হাত হতে কে রক্ষা করবে? আমি বললাম, আল্লাহ। আর তখনি তরবারী পড়ে গেল। আর সে হচ্ছে এই বসা লোকটি। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে কিছু করলেন না। (4)

সার কথা

এ আয়াতের মূলত সার বা মূল কথা হলো; ইসলামে দাওয়াতি কাজ করতে হবে; এবং সেই দাওয়াতি কাজ অবশ্যই কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা হতে হবে।

নিজস্ব কোন কিতাব বা নিজস্ব পন্থায় দাওয়াতি কাজ করে অনেক উন্নতি করলেও সেখানে দেখা মিলবে বিদাত ও শিরক এর। ফয়াসালা হবে না কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা।

তাই দাওয়াতী কাজ করতে হবে ওবশ্যই কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা।

আল্লাহ আমাদের বুঝার ও কুরআন সুন্নাহ মানার তৌফীক দান করুন! আমিন ইয়া রব

“আল্লাহু আলাম”

তথ্যসূত্র

✎ তাফসীরে জাকারিয়া

✎ তাফসীরে আহসানুল বায়ান

  1. সূরা আল মাইদাহ ৬৭ ↩︎
  2. (বুখারী ৪৮৫৫নং) ↩︎
  3. [দেখুন: তিরমিযী ৩০৪৬] ↩︎
  4. [মুসলিম: ৮৪৩; অনুরূপ বুখারী: ২৯১০] ↩︎

পৌছে দিন আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে।

Our Social Media Links

Madbor Logo
Facebook logo
Twitter logo
Youtube icon

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *