ইবাদতের প্রকারভেদ
ইবাদতের অনেক প্রকার রয়েছে। যেমন
- সালাত,
- যাকাত,
- সিয়াম,
- হজ,
- কথা-বার্তায় সত্য বলা,
- আমানত আদায় করা,
- পিতা-মাতার সেবা করা,
- আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা,
- ওয়াদা-অঙ্গীকার পূর্ণ করা,
- সৎকাজের আদেশ দেয়া,
- অন্যায় কাজে বাধা দেয়া,
- কাফের ও মুনাফেকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা,
- জীবের প্রতি দয়া করা,
- ইয়াতীম, মিসকীন, মুসাফির ও দাস-দাসির প্রতি অনুগ্রহ করা,
- জীব-জন্তুর প্রতি ইহসান করা,
- আল্লাহর নিকট দু‘আ করা,
- আল্লাহর যিকির করা,
- কুরআন তেলাওয়াত করা ইত্যাদি।
- আল্লাহ তা‘আলাকে ভালোবাসা,
- আল্লাহর রসূলকে ভালোবাসা,
- আল্লাহকে ভয় করা এবং তার নিকট তাওবা করাও ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত।
- কুরবানী করা,
- আশ্রয় প্রার্থনা করা, সাহায্য চাওয়া এবং ফরিয়াদ করাও ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত।
ইবাদত কার জন্য প্রযোজ্য
সুতরাং সকল প্রকার ইবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্য করা আবশ্যক।
তিনি এক, অদ্বিতীয় এবং তার কোনো শরীক নেই। এগুলো থেকে কোনো কিছু যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্যের জন্য সম্পাদন করলো, যেমন আল্লাহ ছাড়া অন্যের নিকট দু‘আ করলো, অথবা কুরবানী করলো কিংবা মানত করলো, কিংবা মৃত-অনুপস্থিত ব্যক্তির নিকট সাহায্য বা আশ্রয় চাইলো অথবা জীবিত উপস্থিত ব্যক্তির নিকট এমন বিষয়ে সাহায্য চাইলো, যাতে আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ সাহায্য করার ক্ষমতা রাখে না, সে বড় শির্কে লিপ্ত হলো এবং এমন ভয়াবহ গুনাহয় লিপ্ত হলো, যা তাওবা ছাড়া ক্ষমা করা হবে না।
চাই সে এগুলো থেকে কোনো কিছু মূর্তির উদ্দেশ্যে বা গাছের উদ্দেশ্যে অথবা পাথরের উদ্দেশ্যে অথবা কোনো নবীর উদ্দেশ্যে বা কোনো মৃত বা জীবিত অলীর উদ্দেশ্যে নিবেদিত করুক, সবই শিরক। যেমন বর্তমানে কবরের উপর নির্মিত সমাধিগুলোর নিকট করা হয়ে থাকে। ইবাদতের মধ্যে আল্লাহ তা‘আলার সাথে কেউ অন্যকে শরীক করুক, -এটি আল্লাহ তা‘আলা মোটেই পছন্দ করেন না।
চাই কোনো নৈকট্যশীল ফেরেশতা, প্রেরিত রসূল, অলী বা অন্য কাউকে শরীক করা হোক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ﴾
‘‘আল্লাহ তার সাথে শিরক করার গুনাহ মাফ করবেন না। শিরক ছাড়া অন্যান্য যেসব গুনাহ রয়েছে সেগুলো যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দিবেন।’’ (সূরা আন নিসা: ৪৮)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَأَنَّ الْمَسَاجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدْعُوا مَعَ اللَّهِ أَحَدًا﴾
‘‘মসজিদসমুহ আল্লাহর ইবাদত করার জন্যই। অতএব তোমরা আল্লাহর সাথে কাউকে ডেকো না’’। (সূরা আল জিন: ১৮)
সূরা আন নিসার ৩৬ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا﴾
‘‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং তার সাথে অন্য কিছুকে শরীক করো না’’।
আল্লাহ্ ব্যাতীত অন্যের কাছে সাহায্য চাওয়া শির্ক
অত্যন্ত আফসোসের ব্যাপার হলো বর্তমানে বেশ কিছু দেশে ইসলামের দাবিদার অনেক লোক কবরকে মূর্তি বানিয়ে আল্লাহর পরিবর্তে সেগুলোর পূজা করছে। কখনো কখনো তাদের কেউ কেউ কবর ছাড়া অন্যান্য স্থানেও আল্লাহ ছাড়া অন্যের নিকট দু‘আ করে থাকে। কেউ কেউ বসা থেকে উঠার সময় কিংবা আকস্মিক কোনো বিপদা-পদের সম্মুখীন হয়ে বলে ফেলে, ইয়া রসূলাল্লাহ! অথবা বলে মদদ ইয়া রসূলাল্লাহ! মদদ ইয়া ফুলান!
তাদেরকে এ ধরণের কাজ থেকে নিষেধ করা হলে তারা বলে, আমরা জানি এদের হাতে কোনো ক্ষমতা নেই বা এদের কিছু করার নেই, তবে এরা আল্লাহর সৎ বান্দা, আল্লাহর নিকট তাদের মান-মর্যাদা ও ক্ষমতা আছে।
আমরা তাদের মান-মর্যাদার উসীলায় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি। অথচ কুরআন পড়া সত্ত্বেও তারা কুরআনের এ কথা ভুলে গেছে কিংবা ভুলে যাওয়ার ভান করছে যে, হুবহু এ কথাই ছিল মক্কার মুশরিকদের। কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা তাদের এ কথাকে উল্লেখ করেছেন।
যেমন-আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَيَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنْفَعُهُمْ وَيَقُولُونَ هَؤُلَاءِ شُفَعَاؤُنَا عِنْدَ اللَّهِ قُلْ أَتُنَبِّئُونَ اللَّهَ بِمَا لَا يَعْلَمُ فِي السَّمَاوَاتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ﴾
‘‘আর তারা ইবাদত করে আল্লাহ্কে বাদ দিয়ে এমন বস্ত্তর, যা তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারে না এবং তাদের কোনো উপকারও করতে পারে না। তারা বলে, এরা তো আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য সুপারিশকারী। তুমি বলো, তোমরা কি আল্লাহ্কে এমন বিষয়ে অবহিত করছো, যে সম্পর্কে তিনি অবহিত নন আসমান ও যমীনের মাঝে? তিনি পবিত্র সেসব বস্তু থেকে যাকে তোমরা শরীক করছো’’। (সূরা ইউনুস: ১৮)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
‘‘যারা আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য অলী-আওলীয়াকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছে এবং বলে যে, আমরা তাদের ইবাদত এ জন্যই করি, যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়। নিশ্চয় আল্লাহ তাদের পারস্পরিক বিরোধপূর্ণ বিষয়ের ফায়ছালা করে দিবেন। আল্লাহ মিথ্যাবাদী কাফেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না’’। (সূরা আয যুমার: ৩)
আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে মিথ্যুক ও কাফের হিসাবে নাম দিয়েছেন। তারা বিশ্বাস করে তাদের প্রয়োজন পুরণের জন্য এসব অলী-আওলীয়া আল্লাহ তা‘আলা ও তাদের মধ্যে শুধু মধ্যস্থতাকারী। বর্তমানে কবরপূজারীরা এ কথাই বলে। আসলে তাদের অন্তর এবং আইয়্যামে জাহেলীয়ার মুশরিকদের অন্তর পরস্পর সমান।
আলেমদের করণীয়
আলেম সমাজের উপর আবশ্যক হলো, তারা যেন এ নিকৃষ্ট শিরকের প্রতিবাদ করেন এবং মানুষের জন্য এর ভয়াবহতা বর্ণনা করেন। মুসলিম শাসকদের উচিত এ কবরগুলো ভেঙ্গে ফেলা এবং যেসব মসজিদে কবর রয়েছে, তা থেকে সেগুলো সরিয়ে ফেলে মসজিদগুলো পবিত্র করা।
শির্ক এর বিরোধিতা করেছেন যে আলেমগণ
মুসলিমদের অনেক ইমাম এসব শিরকের প্রতিবাদ করেছেন, তা থেকে নিষেধ করেছেন, সাবধান করেছেন এবং এর ভয়াবহ পরিণতির ভয় দেখিয়েছেন। তাদের মধ্যে শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া, তার সুযোগ্য শিষ্য ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম, শাইখ মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাব, শাইখ মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাঈল আস সানআনী, মুহাম্মাদ ইবনে আলী আশ শাওকানী এবং অতীত ও বর্তমানের আরো অনেক ইমাম রয়েছেন। এ বিষয়ে লেখা তাদের কিতাবগুলো আমাদের হাতেই রয়েছে।
আল্লাহই ভালো জানেন।