ইসলামে আকীদার গুরুত্ব
সঠিক ইসলামী আকীদা দিয়েই আল্লাহ তা‘আলা রসূলগণকে পাঠিয়েছেন, কিতাবসমূহ নাযিল করেছেন এবং সমস্ত জিন-ইনসানের উপর এটি কবুল করে নেয়াকে আবশ্যক করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ مَا أُرِيدُ مِنْهُمْ مِنْ رِزْقٍ وَمَا أُرِيدُ أَنْ يُطْعِمُونِ (৫৭) إِنَّ اللَّهَ هُوَ الرَّزَّاقُ ذُو الْقُوَّةِ الْمَتِينُ﴾
অনুবাদঃ ‘‘আমি জিন এবং মানুষকে একমাত্র আমার ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছি। আমি তাদের কাছে কোন রিযিক চাই না কিংবা তারা আমাকে খাওয়াবে তাও চাই না। আল্লাহ নিজেই রিযিকদাতা এবং প্রবল শক্তিধর ও পরাক্রমশালী’’। (সূরা আয যারিয়াত: ৫৬-৫৮)
(সূরা বানী ইসরাঈল: ২৩) আল্লাহ্ বলেনঃ
﴿وَقَضَى رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا﴾
অনুবাদঃ ‘‘তোমার রব এ ফায়ছালা দিয়েছেন যে, তাকে ছাড়া তোমরা অন্য কারো ইবাদত করো না। আর মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার করো’’। (সূরা বানী ইসরাঈল: ২৩)
সূরা আন-নাহাল, আয়াতঃ ৩৬ আল্লাহ্ বলেনঃ
﴿وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اُعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ﴾
অনুবাদঃ ‘‘আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রসূল পাঠিয়েছি। তার মাধ্যমে এ নির্দেশ দিয়েছি যে তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো আর তাগুতকে বর্জন করো’’। (সূরা আন-নাহাল: ৩৬)
সমস্ত রসূলই এ সহীহ আকীদার দাওয়াত নিয়ে এসেছেন। সমস্ত আসমানী কিতাবই এ সহীহ আকীদার বিশদ বিবরণ দেয়ার জন্য নাযিল হয়েছে এবং এটাকে ভঙ্গকারী অথবা এটাকে ত্রুটিযুক্তকারী বিষয়গুলো স্পষ্ট করার জন্যই অবতীর্ণ হয়েছে। প্রাপ্ত বয়স্ক প্রত্যেক মানুষকেই তা গ্রহণ করার আদেশ করা হয়েছে।
সূরা আল বাকারা, আয়াতঃ ২৫৬ আল্লাহ্ বলেনঃ
﴿فَمَنْ يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِنْ بِاللَّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَى لَا انْفِصَامَ لَهَا وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ﴾
অনুবাদঃ
‘‘যে ব্যক্তি ‘তাগুতকে’[1] অস্বীকার করে এবং আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করে, সে ধারণ করে নেয় সুদৃঢ় হাতল, যা বিচ্ছিন্ন হবার নয়। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ’’। (সূরা আল বাকারা: ২৫৬)
অর্থাৎ যে ব্যক্তি এ সঠিক আকীদা থেকে হাত গুটিয়ে নিবে, সে এ বিষয়ে নিজস্ব খেয়াল-খুশী ও বাতিল ধারণার দিকে ধাবিত হবে। সুতরাং যে ব্যক্তি সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হবে সে তার সামনে বাতিল ছাড়া অন্য কিছু দেখতে পাবে না।
সূরা হাজ্জের ৬২ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘‘আল্লাহই সত্য; আর তার পরিবর্তে তারা যাকে ডাকে, তা বাতিল’’।
মোটকথা তাগুতকে অস্বীকার না করা পর্যন্ত কারো ইসলাম পরিশুদ্ধ হবে না। কালেমায়ে তায়্যেবা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর মর্মার্থ এটিই। সুতরাং لاإله এই কথার মাধ্যমে প্রত্যেক ঐ তাগুতকে অস্বীকার করা হয়েছে, আল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদত করা হয়। আর إلا الله কালেমার এ অংশের মাধ্যমে কেবল আল্লাহর একত্ব সাব্যস্ত করা হয়েছে।
সূরা আন নাহাল: আয়াতঃ ৩৬
‘‘আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল পাঠিয়েছি। তার মাধ্যমে এ নির্দেশ দিয়েছি যে তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, আর তাগুতকে বর্জন করো’’ (সূরা আন নাহাল: ৩৬) ।
সুতরাং আল্লাহর ইবাদতকে একটি বিষয় হিসাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। আর তাগুতের ইবাদতকে অন্য একটি বিষয় হিসাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। সুতরাং একজন মানুষ কেবল তখনই মুসলিম বলে গণ্য হবে, যখন সে আল্লাহর ইবাদত করবে এবং একই সাথে তাগুত থেকে দূরে থাকবে।
তাগুত এর পরিচয়
সুতরাং যে ব্যক্তি বা বিষয় সীমা অতিক্রম করে, তাকেই তাগুত বলা হয়। শয়তানকে আল্লাহর আদেশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করার কারণে এবং সীমালংঘন করার কারণে তাগুত বলা হয়। আল্লাহ ব্যতীত অন্য যে মাবুদের ইবাদত করা হয়, সে মাবুদ যদি উক্ত ইবাদতের প্রতি সন্তুষ্ট থাকে, তাহলে তাকে তাগুত বলা হয়। যাদুকর এবং গণক উভয়ই তাগুত। এমনি আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য প্রত্যেক মাবুদই তাগুত।
তথ্যসূত্র
- আল ইরশাদ-সহীহ আকীদার দিশারী
- ইসলামী আকীদা
- শাইখ ড. ছলিহ ইবনে ফাওযান আল ফাওযান