ইসলামে নামাযের মর্যাদা

ইসলামে রয়েছে নামাযের অনেক বড় মর্যাদা। অন্য কোন ইবাদত এই মর্যাদায় পৌঁছতে পারেনি।

নিম্নোক্ত বিষয়গুলো এটি প্রমাণ করে:

নামায ইসলামের মূলস্তম্ভ; যা ছাড়া ইসলাম দণ্ডয়মান হতে পারে না।

মুয়ায বিন জাবাল (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে এসেছে যে, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আমি কী তোমাকে ধর্মের মস্তক, মূলস্তম্ভ ও শীর্ষচূড়া সম্পর্কে অবহিত করব না? আমি বললাম: অবশ্যই; হে আল্লাহ্‌র রাসূল। তিনি বললেন: ধর্মের মস্তক হলো ইসলাম। মূলস্তম্ভ হলো: নামায এবং শীর্ষচূড়া হলো জিহাদ…”।[সুনানে তিরমিযি (২৬১৬), আলবানী ‘সহিহুত তিরমিযি’ গ্রন্থে (২১১০) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]

সাক্ষ্যবাণীর পরেই নামাযের স্থান

যাতে করে সেটি আকিদার শুদ্ধতা ও সঠিকতার প্রমাণ হয় এবং অন্তরে যা স্থান করে নিয়েছে ও সত্যায়ন করেছে সেটার দলিল হয়।

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর নির্মিত: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌ (কোন উপাস্য সত্য নয়; আল্লাহ্‌ ছাড়া) এবং মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্‌ (মুহাম্মাদ আল্লাহ্‌র দাস ও বার্তাবাহক) এই সাক্ষ্য দেয়া; নামায কায়েম করা, যাকাত প্রদান করা, বায়তুল্লাহ্‌র হজ্জ করা এবং রমযানের রোযা রাখা।”[সহিহ বুখারী (৮) ও সহিহ মুসলিম (১৬)]

নামায কায়েম মানে

পরিপূর্ণভাবে সকল কথা ও কাজসহ নির্দিষ্ট সময়মত নামায আদায় করা; যেমনটি কুরআনে কারীমে এসেছে আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “নিশ্চয় সময়মত নামায আদায় করা মুমিনদের উপর ফরযকৃত”।

নামায ফরয হওয়ার স্থানের কারণে অন্য সকল ইবাদতের উপর নামাযের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে।

এই নামাযের বিধান নিয়ে কোন ফেরেশতা পৃথিবীতে নাযিল হননি। কিন্তু আল্লাহ্‌ চেয়েছেন তাঁর রাসূলকে আসমানে ঊর্ধ্ব গমন করাতে এবং তিনিই সরাসরি নামাযের ফরযিয়তের বিষয়ে সম্বোধন করতে। এটি অন্যসব শরয়ি বিধান থেকে নামাযের বিশেষত্ব।

নামাযকে মেরাজের রাতে হিজরতের তিন বছর আগে ফরজ করা হয়েছে।

প্রথমে পঁশ্চাশ ওয়াক্ত নামায ফরয করা হয়েছিল। পরে সেটাকে শিথিল করে পাঁচ ওয়াক্ত করা হয়েছে। তবে পঁশ্চাশ ওয়াক্তের সওয়াব বলবৎ আছে। এটি নামায আল্লাহ্‌র প্রিয় হওয়া এবং নামাযের মহান মর্যাদার প্রমাণ বহন করে।

নামাযের মাধ্যমে আল্লাহ্‌ পাপরাশি ক্ষমা করেন।

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: বকরের হাদিসে এসেছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি্ ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন তিনি বলেন: “যদি তোমাদের কারো দরজায় একটি নহর থাকে এবং সে এ নহর থেকে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে; তার গায়ে কী কোন ময়লা থাকবে; তোমাদের কী মনে হয়? সাহাবীরা বলল: কোন ময়লা থাকবে না। তিনি বললেন: এটাই হলো নামাযের উপমা। নামাযগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ্‌ পাপরাশি ক্ষমা করেন।”[সহিহ বুখারী (৫২৮) ও সহিহ মুসলিম (৬৬৭)]

দ্বীনের সর্বশেষ যে জিনিসটি হারিয়ে যাবে সেটি হলো নামায।

যখন নামায হারিয়ে যাবে তখন গোটা দ্বীনই হারিয়ে যাবে…।

জাবের বিন আব্দুল্লাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “মুমিন ব্যক্তি এবং শির্‌ক-কুফরের মাঝে পার্থক্য নির্ধারণকারী হচ্ছে- নামায বর্জন।”[সহিহ মুসলিম (৮২)]

তাই একজন মুসলিমের উচিত যথাসময়ে নামায আদায়ে সচেষ্ট হওয়া। অলসতা না করা এবং ভুলে না-থাকা। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “অতএব, দুর্ভোগ সেই নামাযীদের জন্য যারা তাদের নামায আদায়ের ব্যাপারে অমনোযোগী।”[সূরা মাউন, আয়াত: ৪-৫]

কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার নামাযের হিসাব নেয়া হবে

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি: “নিশ্চয় কিয়ামতের দিন বান্দার কাছ থেকে সর্বপ্রথম যে আমলের হিসাব নেয়া হবে সেটা হচ্ছে- নামায। যদি নামায ঠিক থাকে তাহলে সে উত্তীর্ণ ও সফলকাম হবে। আর যদি নামায ঠিক না থাকে তাহলে সে ব্যর্থ ও বিফল হবে। যদি তার ফরয নামাযে কিছু ঘাটতি থাকে; তখন রব্ব বলবেন: দেখ; আমার বান্দার কোন নফল আমল আছে কি? থাকলে সেটা দিয়ে ফরযের ঘাটতি পূরণ করা হবে। এভাবে তার বাকী আমলগুলোরও হিসাব নেয়া হবে।”[সুনানে তিরমিযি (৪১৩), সহিহুল জামে (২৫৭৩)]

আমরা আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করছি তিনি যেন আমাদেরকে তাঁর যিকির, তাঁর কৃতজ্ঞতা ও উত্তম ইবাদত পালনে সাহায্য করেন।

তথ্যসূত্র

ড. আত্‌-তায়্যারের রচিত ‘কিতাবুস সালাহ’ (পৃষ্ঠা-১৬) এবং আল-বাস্‌সামের রচিত ‘তাওযিহুল আহকাম’ (১/৩৭১) এবং বালুশির রচিত ‘মাশরুইয়্যাতুস সালাহ’ (পৃষ্ঠা-৩১)]

সংগ্রহ ইসলাম কিউ এ থেকে লিংক দেখতে এখানে ক্লীক করুন।

ইসলামে নামাযের মর্যাদা – আল্লাহ্‌ই ভালো জানেন।

Social Media Links

Madbor Logo
Facebook logo
Twitter logo
Youtube icon
Islamic Books pdf
Pdf Books Site

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *