ফির্কাহ নাজিয়াহর মতাদর্শ

ফির্কাহ নাজিয়াহ পরিচিতি

১। ফির্কাহ নাজিয়াহ (মুক্তি প্রাপ্ত দল), যে ফির্কাহ রসূল (সা.)-এর জীবনাদর্শ ও তাঁর পর তাঁর সাহাবাগণের মতাদর্শের অনুসারী। আর সে আদর্শ হল কুরআন করীম; যা আল্লাহ তার রসূলের উপর অবতীর্ণ করেছেন এবং রসূল তার সাহাবাগণের নিকট তা সহীহ হাদীসে ব্যাখ্যা করেছেন এবং (ঐ কিতাব ও তার ব্যাখ্যা বা সুন্নাহ) উভয়কে সুদৃঢ়ভাবে ধারণ করতে আদেশ করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমি তোমাদের মাঝে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যা অবলম্বন করলে তোমরা কখনই পথভ্রষ্ট হবে না। তা হল আল্লাহর কিতাব এবং আমার সুন্নাহ। হওয’ (কাওসারে) আমার নিকট অবতরণ না করা পর্যন্ত তা বিচ্ছিন্ন হবে না।” (হাদীসটিকে আলবানী সহীহুল জামে’তে সহীহ বলেছেন।)

বিতর্ক ও মতানৈক্য

২। ফির্কাহ নাজিয়াহ বিতর্ক ও মতানৈক্যের সময় আল্লাহর বাণীর অনুসারী হয়ে তাঁর এবং তাঁর রসূলের উক্তির প্রতি রুজু করে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۚ ذَٰلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا

(অর্থাৎ, আর যদি কোন বিষয়ে তোমাদের মতভেদ ঘটে তবে সে বিষয় তোমরা আল্লাহ ও রসূলের প্রতি ফিরিয়ে দাও এটিই তো উত্তম এবং পরিণামে প্রকৃষ্টতর। (সূরা নিসা ৫৯ আয়াত)

তিনি আরো বলেন,

فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا

অর্থাৎ, কিন্তু না, তোমার প্রতিপালকের শপথ! তারা মুমিন হতে পারবে না; যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের নিজেদের বিবাদ-বিসম্বাদের বিচার-ভার তোমার উপর অর্পণ না করে, অতঃপর তোমার সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে তাদের মনে কোন দ্বিধা থাকে এবং সর্বান্তঃকরণে তা মেনে না নেয়। (সূরা নিসা ৬৫ আয়াত)

ফির্কাহ নাজিয়াহর অগ্রাধিকার ও প্রাধান্য দেয়া

৩। ফির্কাহ নাজিয়াহ আল্লাহর বাণীর অনুসারী হয়ে আল্লাহ এবং তার রসূলের উক্তির উপর কারো উক্তিকে অগ্রাধিকার ও প্রাধান্য দেয় না। আল্লাহ তাআলা বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُقَدِّمُوا بَيْنَ يَدَيِ اللَّهِ وَرَسُولِهِ ۖ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ

অর্থাৎ, হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ ও তার রসূলের সম্মুখে তোমরা কোন বিষয়ে অগ্রণী হয়ো না এবং আল্লাহকে ভয় কর। আল্লাহ অবশ্যই সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞ। (সূরা হুজুরাত ১ আয়াত)

ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন,

‘আমার মনে হয় ওরা ধ্বংস হয়ে যাবে। আমি বলছি, নবী (সা.) বলেছেন’ আর ওরা বলছে, আবু বকর ও উমর বলেছেন। (এটিকে আহমদ প্রভৃতিগণ বর্ণনা করেছেন ও আহমাদ শাকের এটিকে সহীহ বলেছেন)

৪. ফির্কাহ নাজিয়াহর বিবেচনায় তওহীদ

ফির্কাহ নাজিয়াহর বিবেচনায় তওহীদ হল, সকল প্রকার ইবাদত; যেমন, দুআ বা প্রার্থনা, সাহায্য ভিক্ষা, বিপদে ও স্বাচ্ছন্দ্যে আহ্বান, যবেহ, নযরনিয়ায, ভরসা, আল্লাহর বিধান অনুসারে বিচার ও শাসন করা ইত্যাদিতে আল্লাহকে একক মানা। এটাই হল সেই বুনিয়াদ যার উপর সঠিক ইসলামী রাষ্ট্র রচিত হয়। সুতরাং অধিকাংশ মুসলিম দেশগুলিতে বর্তমানে যে শির্ক এবং তার বহিঃপ্রকাশ রয়েছে তা দুরীভূত করা একান্ত জরুরী। যেহেতু তা তওহীদের এক দাবী। সে জামাআতের বিজয় অসম্ভব যে জামাআত তওহীদকে অবহেলার সাথে উপেক্ষা করে এবং সকল রসূল ও বিশেষ করে আমাদের সম্মানিত রসূল (সা.) সালাওয়াতুল্লাহি অসালামুহু আলাইহিম আজমাঈন -কে আদর্শ মেনে সর্বপ্রকার শির্কের বিরুদ্ধে অবিশ্রাম সংগ্রাম না করে।

৫। ফির্কাহ নাজিয়াহ তার ইবাদত

ফির্কাহ নাজিয়াহ তার ইবাদতে, ব্যবহারে ও আচরণে বরং সারা জীবনে। রসূল (সা.) ৪-এর সুন্নাহকে জীবিত করে। যার কারণে এত লোকের মাঝে তারা। (প্রবাসীর মত) মুষ্টিমেয় ও বিরল। যেমন রসূল (সা.) তাদের প্রসঙ্গে অবহিত করে বলেছেন, “নিশ্চয় ইসলাম (প্রবাসীর মত অসহায়) অল্পসংখ্যক মানুষ নিয়ে শুরুতে আগমন করেছে এবং অনুরূপ অল্প সংখ্যক মানুষ নিয়েই ভবিষ্যতে প্রত্যাগমন করবে যেমন শুরুতে আগমন করেছিল। সুতরাং সুসংবাদ ঐ মুষ্টিমেয় লোকেদের জন্য।” (হাদীসটিকে মুসলিম বর্ণনা করেছেন)।

অন্য এক বর্ণনায় আছে,“—

সুতরাং শুভ সংবাদ ঐ (প্রবাসীর মত অসহায়) অল্প সংখ্যক লোকদের জন্য যারা মানুষ অসৎ হয়ে গেলে তাদেরকে সংস্কার করে সঠিক পথে রাখতে সচেষ্ট হয়। (আলবানী বলেন এটিকে আবূ আমর আদ্‌দা-নী সহীহ সনদ দ্বারা বর্ণনা করেছেন)।

৬। ফির্কাহ নাজিয়াহ পক্ষপাতিত্ব

ফির্কাহ নাজিয়াহ আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের উক্তি ছাড়া আর কারো উক্তি ও কথার পক্ষপাতিত্ব করে না। যে রসূল ছিলেন নিষ্কলুষ এবং যিনি নিজের খেয়াল-খুশী মতে কোন কথা বলতেন না। কিন্তু তিনি ব্যতীত অন্য মানুষ, যতই তিনি বহুমুখী মর্যাদার অধিকারী হন না কেন, ভুল করতেই পারেন। নবী (সা.) বলেন, “প্রত্যেক আদম সন্তান ক্রটিশীল ও অপরাধী, আর অপরাধীদের মধ্যে উত্তম লোক তারা যারা তওবা করে।” (হাদীসটি হাসান এটিকে আহমদ বর্ণনা করেছেন)।

ইমাম মালেক বলেন,

‘নবী (সা.) এর পর তিনি ব্যতীত প্রত্যেকেরই কথা গ্রহণ করা বা উপেক্ষাও করা যাবে। (অর্থাৎ তিনি ব্যতীত অন্য সকলের অভিমত ও উক্তি গ্রহণীয় এবং উপেক্ষণীয়ও।)

৭। ফির্কাহ নাজিয়াহ হল ‘আহলে হাদীস।

ফির্কাহ নাজিয়াহ হল ‘আহলে হাদীস। যাদের সম্পর্কে আল্লাহর রসূল (সা.) বলেছেন, “আমার উম্মতের মধ্যে এক দল চিরকাল হক (সত্যের) উপর বিজয়ী থাকবে আল্লাহর আদেশ (কিয়ামতের পূর্বমুহূর্ত) আসা পর্যন্ত, যারা তাদেরকে পরিত্যাগ করবে তারা তাদের কোন ক্ষতি সাধন করতে পারবে ।” (এটিকে মুসলিম বর্ণনা করেছেন। কবি বলেন,

“আহলে হাদীসরা আহলে নবী, যদিও

তারা তাঁর ব্যক্তিত্বের সাহচর্যে ছিল না।

কিন্তু তারা তাঁর বাণীর সংসর্গে থাকে।”

৮। ফির্কাহ নাজিয়াহদের শ্রদ্ধা

ফির্কাহ নাজিয়াহ আয়েম্মায়ে মুজতাহেদীন (মুজতাহিদ সকল ইমাম)কে শ্রদ্ধা করে। তাদের মধ্যে কোন একজনের একতরফা পক্ষপাতিত্ব করে না। বরং ফিকহ (দ্বীনের জ্ঞান) গ্রহণ করে কুরআন ও সহীহ হাদীসসমূহ হতে এবং তাঁদের উক্তি সমূহ হতেও -যদি তা সহীহ হাদীসের অনুসারী হয়। আর এই নীতিই তাদের নির্দেশের অনুকুল। যেহেতু তাঁরা সকলেই নিজ নিজ। অনুসারীগণকে সহীহ হাদীসের মত গ্রহণ করতে এবং এর প্রতিকুল প্রত্যেক মত ও উক্তিকে প্রত্যাখ্যান করতে অসিয়ত করে গেছেন।

৯। সৎকাজের আদেশ অসৎকাজের নিষেধ

ফির্কাহ নাজিয়াহ সৎকাজের আদেশ দেয় এবং অসৎ কাজে বাধা প্রদান করে। এই দল বিদআতী সকল নীতি এবং সর্বনাশী দলসমুহকে প্রতিহত করে। যে দলসমূহ উম্মতকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে ও দ্বীনে বিদআত রচনা করে রসূল (সা.) এবং তাঁর সাহাবার সুন্নাহ (ও নীতি) থেকে দূরে সরে আছে।

১০। তরীকা

ফির্কাহ নাজিয়াহ সমগ্র মুসলিম জাতিকে রসূল (সা.) ও তার সাহাবাগণের সুন্নাহ (তরীকা)কে দৃঢ়ভাবে ধারণ করতে আহবান করে। যাতে তাদের বিজয় সুনিশ্চিত হয় এবং আল্লাহর অনুগ্রহে ও তাঁর রসূল (সা.)-এর সুপারিশে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে।

তথ্যসূত্র

  • ফির্‌কাহ
  • নাজিয়া ফির্কাহ নাজিয়াহর মতাদর্শ
  • আবদুল হামীদ ফাইযী

Sourch

Social Share

Social Media

Madbor Logo
Facebook logo
Twitter logo
Youtube icon

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *