হাদীস কাকে বলে?
হাদীস কাকে বলে? হাদীস হলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা, কাজ, সমর্থন এবং গুণাবলির বর্ণনা। ইসলামী শাস্ত্রে এটি একটি মৌলিক উপাদান যা কুরআনের পর মুসলমানদের জন্য জীবন পরিচালনার দিকনির্দেশনা দেয়।
হাদীসের সংজ্ঞা
“হাদীস” শব্দটি আরবি حديث থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ হলো “বর্ণনা”, “সংবাদ” বা “কথা”। ইসলামী পরিভাষায় এটি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর
১. কথা (কওল),
২. কর্ম (ফি’ল),
৩. সমর্থন (তাকরীর), এবং
৪. গুণাবলির (শামায়েল) বর্ণনাকে বোঝায়।
হাদীসের প্রকারভেদ
হাদীস বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। নিচে প্রধান শ্রেণিবিভাগ ও তাদের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হলো:
১. গ্রহণযোগ্যতার দৃষ্টিকোণ থেকে
১. সহীহ হাদীস
- যে হাদীসের সনদ (বর্ণনাকারীর শৃঙ্খল) বিশুদ্ধ, বর্ণনাকারীরা বিশ্বাসযোগ্য এবং হাদীসটি রাসূল (সা.)-এর সাথে সুস্পষ্টভাবে সম্পর্কযুক্ত।
২. হাসান হাদীস
- সহীহ হাদীসের ন্যায় বিশুদ্ধ না হলেও গ্রহণযোগ্য; এর বর্ণনাকারীরা সৎ কিন্তু শীর্ষ মানের নয়।
৩. দাঈফ হাদীস
- যে হাদীসের সনদে কোনো দুর্বলতা বা সন্দেহ রয়েছে।
২. উৎসের দৃষ্টিকোণ থেকে
১. কুদসী হাদীস
- যে হাদীস রাসূলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর কথা বর্ণনা করেছেন। এটি কুরআনের মতো নয়, তবে আল্লাহর নির্দেশ।
- উদাহরণ: আল্লাহ বলেন, “আমার রহমত আমার ক্রোধের উপর বিজয়ী।”
২. নববী হাদীস
- যে হাদীস রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিজস্ব কথা, কাজ, বা অনুমোদনের বর্ণনা।
৩. সনদের ধারাবাহিকতার ভিত্তিতে
১. মুতাওয়াতির হাদীস
- বহু সংখ্যক বর্ণনাকারীর মাধ্যমে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে নির্ভরযোগ্যভাবে বর্ণিত।
- উদাহরণ: রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর “যে ব্যক্তি আমার উপর দরুদ পাঠ করে, তার জন্য রহমত নাজিল হয়”।
২. আহাদ হাদীস
- যে হাদীস সীমিত সংখ্যক বর্ণনাকারীর মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে। এটি তিন ভাগে বিভক্ত:
- গরীব (একজন বর্ণনাকারী),
- আজিজ (দুইজন বর্ণনাকারী),
- মাশহুর (তিন বা তার বেশি বর্ণনাকারী)।
৪. বর্ণনার বিষয়বস্তু অনুসারে
১. সিরাহ হাদীস
- রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন সম্পর্কিত বর্ণনা।
২. ফাজায়েল হাদীস - বিভিন্ন ইবাদতের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কিত বর্ণনা।
৩. আহকাম হাদীস - শরীয়তের বিধি-বিধান সম্পর্কিত হাদীস।
হাদীসের গুরুত্ব
- কুরআনের ব্যাখ্যা ও প্রয়োগে সহায়তা করে।
- ইসলামী আইন, আচার-আচরণ, এবং ইবাদতের ক্ষেত্রে দিকনির্দেশনা প্রদান করে।
- রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনী ও আদর্শ জানার মাধ্যম।
উপসংহার
হাদীস ইসলামী জীবনব্যবস্থার একটি অপরিহার্য অংশ। এটি মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবনে কুরআনের নির্দেশাবলী বাস্তবায়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সঠিকভাবে হাদীস বোঝা এবং তা পালন করা একজন মুসলমানের ইবাদত ও জীবনযাত্রাকে পরিপূর্ণ করে।