শিষ্টাচার

শিষ্টাচার

শিষ্টাচার ইসলামিক শিষ্টাচার: একটি আদর্শ জীবনযাত্রার পথনির্দেশ

ইসলামে শিষ্টাচার বা আচরণবিধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু ধর্মীয় দায়িত্ব নয়; বরং একটি আদর্শ সমাজ গঠনের মূল ভিত্তি। মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় রাসুল হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-কে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা প্রদান করেছেন, যেখানে শিষ্টাচারের গুরুত্ব অপরিসীম। শিষ্টাচার শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং পারিবারিক, সামাজিক এবং বৈশ্বিক ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলে।

ইসলামিক শিষ্টাচারের গুরুত্ব

শিষ্টাচার বা ভালো আচরণ কেবল মানবজীবনকে সুন্দর করে তোলে না, বরং এটি মানুষের ঈমানের একটি বড় নিদর্শন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

“তোমাদের মধ্যে সে-ই উত্তম, যার চরিত্র ভালো।” (বুখারি)

ইসলামিক শিষ্টাচারের মূল দিকগুলো

ইসলামে শিষ্টাচার নানা রকম হতে পারে। নিচে এর গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিক তুলে ধরা হলো:

১. আল্লাহর প্রতি শিষ্টাচার

২. অভিভাবক ও পরিবারের প্রতি শিষ্টাচার

  • পিতামাতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া।
  • ছোটদের স্নেহ করা এবং তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া।
  • পরিবারের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা।

৩. পড়শি ও সমাজের প্রতি শিষ্টাচার

  • পড়শির অধিকার রক্ষা করা।
  • কারও প্রতি অন্যায় না করা।
  • দুর্বল ও নিপীড়িতদের সাহায্য করা।

৪. আতিথেয়তা ও অতিথিপরায়ণতা

  • অতিথিকে সম্মান জানানো।
  • অতিথিকে সাধ্যমতো আপ্যায়ন করা।

৫. বিনয় ও নম্রতা

  • অহংকার থেকে বাঁচা।
  • নম্র আচরণ করা এবং সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা।

৬. শুদ্ধ ভাষা ও সত্যবাদিতা

  • মিথ্যা কথা বলা থেকে বিরত থাকা।
  • অশালীন ও কটূক্তি এড়িয়ে চলা।

৭. পরিচ্ছন্নতা ও শৃঙ্খলা

  • দৈনন্দিন জীবনে পরিচ্ছন্ন থাকা।
  • ঘর-বাড়ি এবং আশপাশের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা।
  • সময়নিষ্ঠ এবং দায়িত্বশীল হওয়া।

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শিষ্টাচার

রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন শিষ্টাচারের জীবন্ত উদাহরণ। তিনি সদা বিনয়ী, নম্র এবং সহানুভূতিশীল ছিলেন। তিনি বলেছেন:

“আমি সুন্দর চরিত্র পরিপূর্ণ করার জন্যই প্রেরিত হয়েছি।” (আবু দাউদ)

তিনি মানুষের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলতেন, কখনো কারও ভুল নিয়ে উপহাস করতেন না এবং সবসময় ক্ষমাশীল থাকতেন।

শিষ্টাচারের উপকারিতা

  • সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় থাকে।
  • অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়।
  • একজন মানুষ আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে।
  • এটি একটি সুশৃঙ্খল এবং মানবিক সমাজ গঠনে সাহায্য করে।

উপসংহার

ইসলামিক শিষ্টাচার শুধু একটি জীবনধারা নয়; এটি আল্লাহর প্রতি ঈমান এবং মানবজীবনের সুন্দর পথে পরিচালনার মাধ্যম। শিষ্টাচার অনুসরণের মাধ্যমে ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে সফলতা লাভ করা যায়। সুতরাং, আমাদের সবার উচিত ইসলামের এই উত্তম শিষ্টাচারগুলোকে নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করা।

“নিশ্চয়ই, আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সৎকর্ম এবং আত্মীয়-স্বজনের প্রতি সদাচরণ করতে নির্দেশ দেন এবং অন্যায়, অশ্লীল কাজ এবং অবাধ্যতা থেকে বারণ করেন।”
(সুরা আন-নাহল: ৯০)

Leave a Reply