শির্ক
শির্ক; শিরকের সংজ্ঞা: শির্ক হচ্ছে আল্লাহর রবূবিয়াতে (কাজে), আসমা ওয়াস্সিফাতে (নাম ও গুণাবলীতে) এবং উলূহিয়াতে (বান্দার সকল ইবাদতে) অথবা এর কোন একটিতে কোন কিছুকে শরিক স্থাপনের করার নাম।
সুতরাং, মানুষ যখন এ বিশ্বাস করবে যে, আল্লাহর সঙ্গে আর কেউ সৃষ্টিকর্তা বা সাহায্যকারী আছে তখন সে মুশরিক।
আর যে এ বিশ্বাস করবে যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ ইবাদতের হকদার সেও মুশরিক। আর যে এ মনে করবে যে, আল্লাহর নাম ও গুণাবলীতে অন্য কেউ সদৃশ আছে সেও মুশরিক।
শির্কের ভয়াবহতা
১. শিরক সবচেয়ে বড় জুলুম; কারণ ইহা আল্লাহর একান্ত বিশেষ হক তাওহীদের ব্যাপারে সীমালঙ্খন। তাওহীদ হলো সবচেয়ে বড় ইনসাফ। পক্ষান্তরে শিরক হলো সবচেয়ে বড় জুলুম ও ঘৃণ্যতা; কারণ এতে বিশ্ব জাহানের প্রতিপালককে ছোট করা হয় এবং তাঁর আনুগত্য থেকে অহংকার করা হয়।
এ ছাড়া আল্লাহর বিশেষ হক অন্যের জন্য সাব্যস্ত করা হয়। শিরকের ভয়াবহতা কঠিন, যার ফলে যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে মুশরিক হয়ে সাক্ষাৎ করবে তিনি তাকে কস্মিনকালেও ক্ষমা করবেন না।
আল্লাহর বাণী
‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে অংশীস্থাপন করলে তাকে ক্ষমা করবেন না এবং এর চেয়ে ছোট পাপ যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করবেন।’’ [1]
শির্ক সবচেয়ে বড় জুলুম তথা অন্যায়। যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করল সে ইবাদতকে যথাস্থানে রাখল না এবং যে হকদার না তার জন্য নির্দিষ্ট করল, যা সবচেয়ে বড় জুলুম।
আল্লাহ্ বলেনঃ
‘‘নিশ্চয় শিরক সবচেয়ে বড় জুলুম।’’ [2]
শির্ক সমস্ত সৎ আমলকে পন্ড করে দেয় এবং ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্তের দিকে ঠেলে দেয়। আর ইহা সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহ।
আল্লাহর বাণী
‘‘তোমার প্রতি ও তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবশ্যই অহি হয়েছে, তুমি আল্লাহর শরিক স্থির করলে তোমার কর্ম পন্ড হবে এবং তুমি হবে ক্ষতিগ্রস্ত। ’’ [3]
২. আবু বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.) বলেছেন: আমি কি তোমাদের সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহ সম্পর্কে জানিয়ে দেব না? রসূল (সা.) এভাবে তিনবার বললেন। তাঁরা (সাহাবাগণ) বললেন: হ্যাঁ, ইয়া রসূলাল্লাহ! তিনি বললেন: ‘‘আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা, মা-বাবার অবাধ্য হওয়া। রসূল (সা.) এবার হেলান দেয়া অবস্থা থেকে উঠে বসে বললেন: সাবধান! মিথ্যা কথা থেকে সাবধান! বর্ণনাকারী বলেন: এ কথাটি রসূল (সা.) বারবার বলতেছিলেন এমনকি আমরা বলতে ছিলাম: হায়! যদি তিনি চুপ করতেন।’’[4]
শিরকের ঘৃণ্যতা ও কুপ্রভাব
আল্লাহ তা‘য়ালা শিরকের চারটি ঘৃণ্যতা ও কু-পরিণতি সম্পর্কে চারটি আয়াতে উল্লেখ করেছেন তা হলো:
আল্লাহর বাণী:
‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে অংশীস্থাপন করলে তাকে ক্ষমা করবেন না এবং এর চেয়ে ছোট পাপ যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করবেন। আর যে শিরক করল সে বড় ধরনের অপবাদ ধারণ করল।’’ [5]
আল্লাহর বাণী:
‘‘আর যে আল্লাহর সঙ্গে শিরক করল সে বহু দূরের ভ্রষ্টতায় পতিত হলো।’’ [6]
আল্লাহর বাণী:
‘‘নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর অংশীস্থাপন করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন এবং তার বাসস্থান হবে জাহান্নামে। আর এরূপ অত্যাচারীদের জন্যে কোন সাহায্যকারী হবে না।’’ [7]
আল্লাহর বাণী:
‘‘আর যে আল্লাহর সাথে শিরক করল; সে যেন আকাশ থেকে ছিটকে পড়ল। অত:পর মৃতভোজী পাখী তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল অথবা বাতাস তাকে উড়িয়ে নিয়ে কোন দূরবর্তী স্থানে নিক্ষেপ করল।’’ [8]
শিরকের ভিত্তি:
শিরকের ভিত্তি ও ঘাঁটি যার উপর শিরকের বুনিয়াদ তা হলো গাইরুল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া অন্য যে কেউ)-এর সাথে সম্পর্ক স্থাপন। আর যে গাইরুল্লাহ এর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করবে, আল্লাহ তাকে যার সঙ্গে সে সম্পর্ক করেছে তার দিকে সোপর্দ করে দিবেন। তার দ্বারা তাকে শাস্তি দিবেন এবং যার সঙ্গে সম্পর্ক জুড়েছে সেদিক থেকে অপদস্ত করবেন। যার ফলে সে সবার নিকট ঘৃণিত হবে কেউ তার প্রশংসাকারী থাকবে না। অপদস্ত হবে কেউ তার সাহায্যকারী হবে না।
যেমন আল্লাহ বলেন:
‘‘আল্লাহর সঙ্গে অন্য কাউকে শরিক করো না। তাহলে তুমি নিন্দিত ও অসহায় হয়ে পড়বে।’’ [9]
আল্লাহ্র সাবধানতা
‘‘অতএব, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরিক না করে।’’ [10]
তথ্যসূত্র
- সূরা নিসা: ৪৮ ↩︎
- সূরা লোকমান:১৩ ↩︎
- সূরা জুমার: ৬৫ ↩︎
- বুখারী হাঃ নং ২৬৫৪ ও মুসলিম হাঃ নং ৮৭ ↩︎
- সূরা নিসা: ৪৮ ↩︎
- সূরা নিসা: ১১৬ ↩︎
- সূরা মায়েদা:৭২ ↩︎
- সূরা হাজ্ব: ৩১ ↩︎
- সূরা বনি ইসরাঈল: ২২ ↩︎
- সূরা কাহাফ:১১০ ↩︎
সোশ্যাল মিডিয়া
সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের সাথু যুক্ত থাকুন
শেয়ার
শেয়ার করে আপনিও ইসলাম প্রচার করুন