প্রশ্নঃপ্যান্টের সাথে সংযুক্ত মোজার উপর মাসেহ করার বিধান কি? (স্পষ্টীকরণ: যে ধরণের মোজা বেলি ড্যান্সা রেরা পরে থাকে)? এ ধরণের মোজা পরা কি ইসবাল (টাকনুর নীচে পোশাক পরিধান) হিসেবে গণ্য হবে?

উত্তর; আলহামদু লিল্লাহ।.

মোজার উপর মাসেহ করা জায়েয; যদি সে মোজাদ্বয় পায়ের টাকনুদ্বয়কে আচ্ছাদিত করে রাখে এবং মোজাদ্বয় পরিপূর্ণ পবিত্র অবস্থায় পরিধান করা হয়।

অর্থাৎ যে পবিত্রতা অর্জনের সময় পা-দ্বয় ধৌত করা হয়েছে। এরপর চাইলে মোজাদ্বয়ের ওপর মাসেহ করতে পারবে। মোজার ওপর মাসেহ করার শর্তগুলো জানার জন্য ।

মুগীরাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত।

তিনি বলেনঃ আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে কোন এক সফরে ছিলাম। (উযূ করার সময়) আমি তাঁর মোজা দু’টি খুলতে চাইলে তিনি বললেনঃ ‘ও দু’টো থাক, আমি পবিত্র অবস্থায় ও দু’টি পরেছিলাম’। (এই বলে) তিনি তার উপর মাসেহ করলেন। [1]

মুকীম অবস্থায়ও মোজার উপর মাসাহ করা যায়

অত্র হাদীসে সফর বলতে তাবুকের যুদ্ধের জন্য সফর বুঝানো হয়েছে। কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে, সেটা ছিল তাবুকের যুদ্ধের সফরের ফজরের সালাতে। তবে এখানে এটা জানা দরকার যে, সফরে থাকার কথা বলা হলেও অন্য হাদীস দ্বারা বুঝা যায় মোজার উপর মাসাহ করার জন্য সফরে থাকা শর্ত নয়। বরং মুকীম অবস্থাতেও মোজার উপর মাসাহ করা যাবে।

মোজার উপর মাসাহ করার শর্ত

এর শর্ত হচ্ছে, পরিধেয় মোজা বৈধ ও পবিত্র হওয়া। ফরয পরিমাণ অংশ ঢেকে থাকা এবং মোজা পবিত্র অবস্থায় পরিধান করা।

মোজার ওপর মাসাহ করার পদ্ধতি হচ্ছে পানিতে হাত ভিজিয়ে পায়ের উপরিভাগের আঙ্গুলের অগ্রভাগ থেকে নলা পর্যন্ত একবার মাসাহ করা। পায়ের নিচে ও পিছনে মাসাহ নয়।।

মোজার উপর মাসাহ ভঙ্গের কারণসমূহ হচ্ছে-

  • (১) পায়ের থেকে মোজা খুলে ফেলা।
  • (২) মোজা খুলে ফেলা অত্যাবশ্যকীয় হলো, যেমন গোসল ফরয হওয়া।
  • (৩) পরিহিত মোজা বড় ছিদ্র বা ছিঁড়ে যাওয়া।
  • (৪) মাসাহের মেয়াদ পূর্ণ হওয়া।

তবে সব ধরনের পট্টি বা ব্যান্ডেজ থুলে না ফেলা পর্যন্ত তার উপর মাসাহ করা জায়েয, এতে মেয়াদ যতই দীর্ঘ হোক বা জানারত তথা বড় নাপাকী লাগুক।

হাদীসের শিক্ষা

১. পা ধোয়ার চেয়ে মোজার উপর মাসাহ করা উত্তম। কেননা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু “আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ উত্তমটিই তালাশ করতেন।

২. মোজার মতোই বিধান হবে ‘জাওরাব’ বা নিচের অংশে চামড়া বিশিষ্ট কাপড়ের মোজার বিধান। কারণ তাও পা ঢেকে রাখে আর তা খুলতেও কষ্ট অনুভূত হয়। এজন্যই অনেকে বর্তমান কাপড়ের মোজাকেও এর অন্তর্ভুক্ত বলেছেন, যদি তা মোটা কাপড়ের হয়, শরীর দেখা না যায়। যদিও কোনো কোনো ইমাম কাপড়ের মোজার উপর মাসাহ করার বিষয়টিতে মতভেদ করেছেন।

৩. পবিত্র অবস্থায় মোজা পরিধান করা হলে তারপর ওযূ ভঙ্গ হলে সে মোজা আর খুলতে হয় না। এ অবস্থায় মুসাফিরের জন্য তিন দিন তিন রাত্রি, আর মুকীম বা বাসস্থানে অবস্থানকারীর জন্য একদিন এক রাত্রি পর্যন্ত ওযূর অন্যান্য অঙ্গ ধৌত করা হলেও পা ধোয়া লাগবে না। পায়ের উপর যে মোজা আছে তার উপরিভাগে একবার মাসাহ করলেই ওযূ হয়ে যাবে। মোজা পরিধান করার পরে প্রথম বার অপবিত্র হওয়া থেকে সময়সীমা শুরু হয়।

৪. নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের উত্তম চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ; কারণ তিনি মুগীরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুকে মোজা খুলতে নিষেধ করেন, তারপর তার কারণ বর্ণনা করে দেন যে, তিনি তা পবিত্র অবস্থায় পরিধান করেছিলেন। এর মাধ্যমে মুগীরার অন্তরে প্রশান্তি আসবে, দীন জানবে এবং বর্ণনা করতে সক্ষম হবে।

৫. এর মাধ্যমে মুগীরাহ ইবন শু’বা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর মর্যাদা প্রকাশ পেয়েছে।

৬. আরো বুঝা গেল যে, ওযূ পবিত্রতা ইত্যাদিতে মানুষের সাহায্য নেয়া বৈধ। যেমন পানি নিয়ে আসা পানি ঢেলে দেয়া ইত্যাদি।

৭. ছাত্র কর্তৃক উস্তাদের খেদমত করা; যার মাধ্যমে শিক্ষা অর্জন করা তার জন্য সহজ যায়।

তথ্যসূত্র

  1. বর্ণনাকারীঃ মুগীরা ইবনু শু’বা (রাঃ) সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) পরিচ্ছেদঃ ৪/৪৯. ↩︎

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *