প্রসিদ্ধ মাযহাব চারটি
- ১. হানাফী
- ২. শাফি’ঈ
- ৩. মালেকী
- ৪. হাম্বলী
হানাফি মাযহাব
হানাফি মাযহাব হলো সুন্নি সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি মাযহাব। এই মাযহাব অবলম্বী মানুষেরা ইমাম আবু হানিফার অনুসারী।
ইমাম আবু হানিফার দুই ছাত্র আবু ইউসুফ ও মুহাম্মদ ইবনে হাসান শাইবানীর অধীনে এই মতবাদ ছড়িয়ে পড়ে। বহু মুসলিম দেশে এই মাযহাব প্রচলিত।
শাফি’ঈ মাযহাব
তিনি ইমাম শাফেয়ী নামে বেশি পরিচিত । তাকে শায়েখ আল-ইসলাম হিসাবেও সম্বোধন করা হয় এবং তিনি ইসলামের প্রধান চারটি মাযহাবের একটি শাফি’ঈ মাযহাবের প্রবক্তা।
তিনি ছিলেন ইমাম মালিক ইবনে আনাসের অন্যতম সেরা শিক্ষার্থী এবং তিনি নাজারাহ-এর গভর্নর হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
মালেকী মাযহাব
ইমাম মালিকের অনুগামীদের মালিকি বলা হয়। মুলত উত্তর ও পশ্চিম আফ্রিকায় এই মাযহাবের মানুষদের দেখা যায়। এই মাযহাবের মধ্যে বিভিন্ন উপজাতীয় মানুষ (যেমন নোমাড) দেখা যায়। …
লিবিয়া, নাইজার, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, মরক্কো, পশ্চিম সাহারা, চাদ ইত্যাদি দেশের অধিকাংশ মানুষ এই মতালম্বী।
হাম্বলি মাযহাব
হাম্বলি মাযহাব সুন্নি ইসলামের অন্যতম চারটি মাযহাবের মধ্যে একটি।
এটা ইরাকি আলেম ইমাম আহমদ বিন মুহাম্মাদ বিন হাম্বল আবদুল্লাহ আল-শাইবানীর নামে নামকরণ করা হয়েছে, আর প্রাতিষ্ঠানিরূপ দিয়েছেন ইমাম আহমদ ইবন হাম্বলের ছাত্ররা।
চারটি মাযহাবের মধ্যে, হাম্বলি মাযহাবের অনুসারী সংখ্যাই সবচেয়ে কম।
মাযহাব
মাযহাব হল ইসলামী ফিকহ বা আইনশাস্ত্রের অন্তর্ভুক্ত এক একটি চর্চাকেন্দ্র।
নবী মুহাম্মদ (স.)-এর ইসলাম প্রচারের পর আনুমানিক প্রায় দেড়শত বছরের মধ্যে অনেক মাযহাবের উৎপত্তি হয়।
সাহাবাদের মধ্যেও অনেকেই নিজস্ব মাযহাব প্রতিষ্ঠার জন্য কৃতিত্বের অধিকারী হয়ে আছেন।
সময়ের সাথে সাথে সেগুলো বিবর্ধিত, বিভিন্ন স্থানে সম্প্রসারিত ও বিভাজিত হয়, কিছু আবার সীমিত চর্চার মাধ্যমে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
অবশেষে সাম্প্রতিক শতকে মোট আটটি প্রধান মাযহাবকে বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায় কর্তৃক সার্বিকভাবে গড় হিসাব অনুযায়ী পালনযোগ্য হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে।
ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) বলেনঃ
তোমরা যদি আমার কোন কথা প্রকাশ্য কোরআন ও সহীহ হাদীসের বিপরীত দেখতে পাও, তাহলে তোমরা কোরআন ও সহীহ হাদীস অনুযায়ী আমল করবে এবং আমার কথাকে দেয়ালে ছুঁড়ে মারবে। (1)
ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) বলেনঃ
আমার কোন কথা যদি আল্লাহ্র কিতাব কোরআন ও রাসুলের সহীহ হাদীসের বিপরীত হয়, তাহলে আমার কথা বা মত পরিহার কর। (2)
ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) বলেনঃ
যখন কোন বিষয়ে সহীহ হাদীস পাওয়া যায় তখন তা-ই হবে আমার মাযহাব অর্থাৎ তা-ই হবে আমার মত এবং সেই অনুযায়ী আমল করতে হবে। (3)
ইমাম মালিক বলতেন
তোমরা মতামত বা রায় বা কিয়াস পন্থীদের (অর্থাৎ শুধু কিয়াসের ভিত্তিতে যারা কথা বলে তাদের থেকে) বেচে থাক। কেননা তারা রাসুলের সুন্নাতের শত্রু। (4)
ইমাম শাফে’য়ী (রহঃ) এর উক্তি
যদি আমি এমন কোন কথা বলি অথচ নবী (সাঃ) আমার কথার বিপরীত কথা বলেছেন, তাহলে যা নবী (সাঃ) এর হাদীস দ্বারা সহীহ সাব্যস্ত হয়েছে সেটাই উত্তম। তোমরা সে ক্ষেত্রে আমার অন্ধ অনুসরণ করো না। (5)
ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ) বলতেনঃ
তোমরা আমার অন্ধ অনুসরণ করো না, এমন কি ইমাম মালেক, শাফেয়ী, হানীফা, সাওরী তাদেরও না; বরং তারা যেখান থেকে সমাধান নিয়েছেন তুমিও সেখান থেকে যাচাই বা প্রমাণ করে নাও। (6)
সমাধান
প্রসিদ্ধ চার মাযহাবের কোন ইমাম ই বলেন নাই যে মাযহাহ মানা ফরজ।
আহলে হাদীস ব্যতীত আর কেউ বলেন নাই যে মাযহাব মানা গোনাহের কাজ,
মাযহান মানা যাবে এতে কোন সমস্যা নেই তবে, মাযহাবের কোন ফতুয়া যদি কুরআন সুন্নাহএর বাহিরে চলে যায় সে ক্ষেত্রে ইমামগণ আগেই তাদের বক্তব্যে বলে গেছেন যে কুরআন ও সুন্নাহ আগে আমাদের মাযহাব পড়ে।
আলহামদুলিল্লাহ্
আমরা মাযহাব মানব কিন্তু কুরআন ও সুন্নাহর আগে নয় পড়ে। আগে কুরআন ও সুন্নাহ কুরআন ও সুন্নাহর অনুকুলেই মাযহাব মানা যাবে।
ইমামগণ ইসলামের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছেন, যেন আমরা সহযেই ইসলামকে বুঝতে পারি। তাদের সম্মান দেয়া আমাদের জন্য ফরজ ।
হে আল্লাহ্ সঠিক ইসলামকে জানার, বুঝার ও মানার জন্য আমাদের তৌফীক দান করুন, আমিন ইয়া রব্বুল আলামিন।
তথ্যসূত্র
- মীযানে কুবরা গ্রন্থের ১ম খন্ড, পৃঃ- ৫৭
- আল ইকায আল ফোলানী গ্রন্থের পৃঃ নং- ৫০
- রদ্দুল মুখতারঃ ১ম খন্ড, পৃঃ- ৪
- আল আহকাম কিতাবের ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃঃ নং- ৫৬
- ইকদুল জীদ গ্রন্থের ৫৪ নং পৃঃ
- ঈলামুল মুওয়াক্কেয়ীন ২/৩০২ ; ইকদুল জীদ; ৮১ নং পৃঃ