⦿ আসমানী কিতাব ও রাসূলগণের প্রতি ঈমান

আল্লাহ্‌ যখন আদম আলাইহিস সালামকে পৃথিবীতে পাঠালেন এবং তাঁর বংশধরগণ পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ল তখন তিনি তাদেরকে বল্গাহীনভাবে ছেড়ে দেননি। বরং তিনি তাদের জন্য জীবিকার ব্যবস্থা করেছেন, তাঁর উপর এবং তাঁর বংশধরদের উপর অহী নাযিল করেছেন।

কিন্তু, তাঁর বংশধরদের মধ্যে কেউ ঈমান এনেছে; আর কেউ কুফরি করেছে:

“আর অবশ্যই আমরা প্রত্যেক জাতির মধ্যে রাসূল পাঠিয়েছিলাম এ নির্দেশ দিয়ে যে, তোমরা আল্লাহ্‌র ইবাদত কর এবং তাগূতকে বর্জন কর। অতঃপর তাদের কিছু সংখ্যককে আল্লাহ্‌ হিদায়াত দিয়েছেন, আর তাদের কিছু সংখ্যকের উপর পথভ্রষ্টতা সাব্যস্ত হয়েছিল।”[1]

আল্লাহ্‌ যে আসমানী কিতাবগুলো নাযিল করেছেন সেগুলোর মধ্যে প্রধান

চারটি: তৌরাত, ইঞ্জিল, যাবুর ও কুরআন। “তিনি সত্যসহ আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন, পূর্বে যা এসেছে তার সত্যতা প্রতিপন্নকারীরূপে। আর তিনি নাযিল করেছিলেন তাওরাত ও ইঞ্জিল।”[2]

আল্লাহ্‌ তাআলা আরও বলেন: “আর আমি দাউদকে দিয়েছি যাবুর”[সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত: ৫৫]

নবী-রাসূলগণের সংখ্যা

নবী-রাসূলগণের সংখ্যা অনেক। তাদের সংখ্যা আল্লাহ্‌ ছাড়া কেউ জানে না। তাদের কারো কারো কাহিনী আল্লাহ্‌ আমাদেরকে অবহিত করেছেন; আর কারো কারো কাহিনী আমাদেরকে অবহিত করেননি: “আর অনেক রাসূল, যাদের বর্ণনা আমরা আপনাকে পূর্বে দিয়েছি এবং অনেক রাসূল, যাদের বর্ণনা আমরা আপনাকে দেইনি”[3]

আল্লাহ্‌ যত কিতাব নাযিল করেছেন সকল কিতাবের প্রতি ঈমান আনা এবং যত নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন সকল নবী-রাসূলের প্রতি ঈমান আনা ফরয।

আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন:

“হে মুমিনগণ! তোমরা ঈমান আন আল্লাহ্‌র প্রতি, তাঁর রাসূলের প্রতি, এবং সে কিতাবের প্রতি যা আল্লাহ্‌ তাঁর রাসূলের উপর নাযিল করেছেন। আর সে গ্রন্থের প্রতিও যা তার পূর্বে তিনি নাযিল করেছেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌, তাঁর ফিরিশ্‌তাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ ও শেষ দিবসের প্রতি কুফরী করে সে সুদূর বিভ্রান্তিতে পতিত হলো।”[4]

রাসূল ও নবী হচ্ছে—

একই অভিধার দুইটি নাম। নবী-রাসূল হচ্ছেন এমন ব্যক্তি আল্লাহ্‌ যাকে মনোনীত করে মানুষকে এক আল্লাহ্‌র ইবাদতের দিকে দাওয়াত দেয়ার জন্য, আল্লাহ্‌র দ্বীন প্রচার করার জন্য পাঠিয়েছেন:

“সুসংবাদদাতা ও সাবধানকারী রাসূলগণ প্রেরণ করেছি, যাতে রাসূলগণ আসার পর আল্লাহ্‌র বিরুদ্ধে মানুষের কোন অভিযোগ না থাকে।” [5]

নবী-রাসূলগণের সংখ্যা

নবী-রাসূলগণের সংখ্যা অনেক। কুরআনে কারীমে আল্লাহ্‌ ২৫ জন নবীর নাম উল্লেখ করেছেন। তাঁদের সকলের উপর ঈমান আনা ফরয। তাঁরা হচ্ছে-

  • আদম আঃ,
  • ইদ্রিস আঃ,
  • নূহ আঃ,
  • হুদ আঃ,
  • সালেহ আঃ ,
  • ইব্রাহিম আঃ
  • লুত আঃ,
  • ইসমাইল আঃ,
  • ইসহাক আঃ
  • ইয়াকুব আঃ,
  • ইউসুফ আঃ,
  • শুয়াইব আঃ,
  • আইয়ুব আঃ
  • যুলকিফল আঃ,
  • মূসা আঃ,
  • হারুন আঃ,
  • দাউদ আঃ,
  • সুলাইমান আঃ,
  • ইলিয়াস আঃ,
  • আল-ইসাআ আঃ,
  • ইউনুস আঃ,
  • যাকরিয়্যা আঃ,
  • ইয়াহইয়া আঃ,
  • ইসা আঃ,
  • মুহাম্মদ সাঃ (তাঁদের সকলের উপর আল্লাহ্‌র রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক)।

কুরআন

কুরআনে কারীম হচ্ছে সবচেয়ে মর্যাদাবান ও সর্বশেষ আসমানী গ্রন্থ। কুরআন তার পূর্বে নাযিল হওয়া গ্রন্থসমূহকে রহিতকারী এবং সেগুলোর উপর কর্তৃত্বকারী। তাই কুরআন অনুযায়ী আমল করা ও অন্য কিতাবের উপর আমল বর্জন করা ফরয।

“আর আমরা আপনার প্রতি সত্যসহ কিতাব নাযিল করেছি ইতোপূর্বেকার কিতাবসমূহের সত্যতা প্রতিপন্নকারী ও সেগুলোর তদারককারীরূপে। সুতরাং আল্লাহ্‌ যা নাযিল করেছেন সে অনুযায়ী আপনি তাদের বিচার নিষ্পত্তি করুন।”[6]

আল্লাহ্‌ বনী আদমের মধ্য থেকে কাউকে কাউকে রাসূল ও নবী হিসেবে মনোনীত করেছেন এবং প্রত্যেক উম্মতের কাছে নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। তিনি তাদেরকে এক আল্লাহ্‌র ইবাদতের দিকে মানুষকে আহ্বান করার এবং শরিয়তের বিধি-বিধান বর্ণনা করার নির্দেশ দিয়েছেন; যে বিধি-বিধানের মধ্যে দুনিয়া ও আখিরাতের সুখ-শান্তি নিহিত রয়েছে।

তিনি তাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন— ঈমানদারদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ দেয়ার ও কাফেরদেরকে জাহান্নামের হুমকি দেয়ার:

“আর আমরা অবশ্যই প্রত্যেক জাতির মধ্যে রাসূল পাঠিয়েছিলাম এ নির্দেশ দিয়ে যে, তোমরা আল্লাহ্‌র ইবাদত কর এবং তাগূতকে বর্জন কর। অতঃপর তাদের কিছু সংখ্যককে আল্লাহ্‌ হিদায়াত দিয়েছেন, আর তাদের কিছু সংখ্যকের উপর পথভ্রান্তি সাব্যস্ত হয়েছিল।”[7]

আল্লাহ্‌ তাআলা কিছু কিছু নবী-রাসূলকে অন্য নবী-রাসূলদের উপর মর্যাদা দিয়েছেন। রাসূলগণের মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ হচ্ছেন তাঁরা যাদেরকে বলা হয় ‘উলুল আযম’। তাঁরা হচ্ছেন- নূহ, ইব্রাহিম, মুসা, ইসা ও মুহাম্মদ (তাঁদের উপর আল্লাহর রহমত ও দয়া বর্ষিত হোক)। আর এঁদের মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ হচ্ছেন- মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

প্রত্যেক নবীকে আল্লাহ্‌ তাআলা তাঁর কওমের লোকদের নিকট পাঠাতেন। আর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সমস্ত মানবজাতির কাছে পাঠিয়েছেন। তিনি হচ্ছেন- সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল। তাঁর সম্পর্কে

আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন:

“আর আমরা তো আপনাকে সমগ্র মানুষের জন্যই সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্ররণ করেছি; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না।”[8]

আল্লাহ্‌ নবী-রাসূলকে মনোনীত করেছেন এবং তাদেরকে তাদের কওমের জন্য আদর্শ-পুরুষ বানিয়েছেন। আল্লাহ্‌ তাঁদেরকে প্রতিপালন করেছেন, শিষ্টাচার শিক্ষা দিয়েছেন, রিসালত দিয়ে (বার্তাবাহক বানিয়ে) সম্মানিত করেছেন, পাপ-পঙ্কিলতায় লিপ্ত হওয়া থেকে তাদেরকে সুরক্ষা করেছেন এবং মোজেজা প্রদান করার মাধ্যমে তাদের শক্তি বৃদ্ধি করেছেন।

তাই নবী-রাসূলগণ হচ্ছেন পরিপূর্ণ আকার ও আখলাকের অধিকারী, জ্ঞানের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ, সত্যভাষী এবং সুশোভিত জীবনধারার অধিকারী। আল্লাহ্‌ তাআলা তাঁদের সম্পর্কে বলেন:

“আর আমরা তাদেরকে করেছিলাম নেতা; তারা আমাদের নির্দেশ অনুসারে মানুষকে সঠিক পথ দেখাত; আর আমরা তাদেরকে সৎকাজ করতে ও সালাত কায়েম করতে এবং যাকাত প্রদান করতে ওহী পাঠিয়েছিলাম; এবং তারা আমাদেরই ইবাদতকারী ছিল।”[9]

নবীগণ আল্লাহ্‌র আনুগত্য ও চরিত্র মাধুর্যের ক্ষেত্রে এমন উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হওয়ার কারণে আল্লাহ আমাদেরকে তাঁদের অনুসরণ করার আদেশ দিয়েছেন।

আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন

“এরাই তারা, যাদেরকে আল্লাহ্‌ হিদায়াত দান করেছেন, কাজেই আপনি তাদের পথ অনুসরণ করুন।”[সূরা আনআম, আয়াত: ৯০]

আমাদের নবীর মধ্যে সকল নবী-রাসূলের ভাল গুণাবলী সন্নিবেশিত হয়েছে এবং আল্লাহ্‌ তাঁকে উন্নত আখলাক দান করেছেন। তাই আমাদেরকে প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁকে অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

“অবশ্যই তোমাদের জন্য রয়েছে রাসূলুল্লাহ্‌র মধ্যে উত্তম আদর্শ; তার জন্য যে আশা রাখে আল্লাহ্‌ ও শেষ দিনের এবং আল্লাহ্‌কে বেশি বেশি স্মরণ করে।”[10]

নবী ও রাসূলের প্রতি ঈমান

সকল নবী ও রাসূলের প্রতি ঈমান আনা ইসলামী আকিদার অন্যতম রুকন; যে রুকনগুলোর প্রতি ঈমান না-আনলে কোন মুসলমানের ঈমান পূর্ণ হবে না। কারণ নবী-রাসূলগণ সকলে একই আকিদার দিকে আহ্বান করেছেন। আর তা হচ্ছে- এক আল্লাহ্‌র প্রতি ঈমান আনা।

আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন:

“তোমরা বল, ‘আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহ্‌র প্রতি এবং যা আমাদের প্রতি নাযিল হয়েছে এবং যা ইব্রাহীম, ইস্‌মাঈল, ইসহাক, ইয়া’কুব ও তার বংশধরদের প্রতি নাযিল হয়েছে, এবং যা মূসা, ঈসা ও অন্যান্য নবীগণকে তাদের রব- এর নিকট হতে দেয়া হয়েছে। আমরা তাদের মধ্যে কোন তারতম্য করি না। আর আমরা তাঁরই কাছে আত্মসমর্পণকারী।”[11]

তথ্যসূত্র

  1. সূরা নাহল, আয়াত: ৩৬ ↩︎
  2. সূরা আলে ইমরান, আয়াত:০৩ ↩︎
  3. সূরা নিসা, আয়াত: ১৬৪ ↩︎
  4. সূরা নিসা, আয়াত: ১৩৬ ↩︎
  5. সূরা নিসা, আয়াত: ১৬৫ ↩︎
  6. সূরা মায়েদা, আয়াত: ৪৮ ↩︎
  7. সূরা নাহল, আয়াত: ৩৬ ↩︎
  8. সূরা সাবা, আয়াত: ২৮ ↩︎
  9. সূরা আম্বিয়া, আয়াত: ৭৩ ↩︎
  10. সূরা আহযাব, আয়াত: ২১ ↩︎
  11. সূরা বাকারা, আয়াত: ১৩৬ ↩︎

মুল সূত্র:

শাইখ মুহাম্মদ বিন ইব্রাহিম আল-তুয়াইজিরি রচিত ‘উসুলুদ দ্বীন আল-ইসলামী’ থেকে সংকলিত

সোশ্যাল মিডিয়া

ইসলামিক বই pdf ফ্রী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *